032. সূরা আস সেজদাহ্ (Surah As Sajdah)

 


শানে নুযুল


নামকরণঃ

১৫ আয়াতের সাজদাহর যে বিষয়বস্তু এসেছে তাকেই এ সূরার শিরোনাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

নাযিল হবার সময়কালঃ

বর্ণনাভঙ্গি থেকে বুঝা যায়, এর নাযিল হবার সময়টা হচ্ছে মক্কার মধ্যযুগ এবং তারও একেবারে শুরুর দিকে। কারণ পরবর্তী যুগে নাযিলকৃত সূরাগুলোর পশ্চাতভূমিতে যেমন জুলুম- নিপীড়নের প্রচণ্ডতা দেখা যায় এ সূরাটির পটভূমিতে সে ধরনের প্রচণ্ডতা অনুপস্থিত।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে , তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত সম্পর্কে লোকদের সন্দেহ দূর করা এবং এ তিনটি সত্যের প্রতি ঈমান আনার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানানো। মক্কার কাফেরদের মধ্যে নবী (সা) সম্পর্কে আলোচনা চলছিল যে, এ ব্যক্তি অদ্ভূত সব কথা বানিয়ে বানিয়ে শুনাচ্ছে। কখনো মরার পরের খবরও দেয় এবং বলে মরে পঁচে মাটিতে মিশে যাবার পর তোমাদের আবার উঠানো হবে। সবার হিসেব-নিকেশ হবে এবং দোজখ হবে ও বেহেশত হবে। কখনো বলে , এসব দেব-দেবী, ঠাকুর-টাকুর এসব কিছুই নয়। একমাত্র এক ও একক আল্লাহই উপাস্য। কখনো বলে , আমি আল্লাহর রাসূল। আকাশ থেকে আমার কাছে অহী আসে। যে বাণী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি এসব আমার বাণী নয় বরং আল্লাহর বাণী। এ ব্যক্তি আমাদের এ অদ্ভূত কাহিনী শুনাচ্ছে । এসব কথার জবাব দেয়াই হচ্ছে এ সূরার মূল আলোচ্য বিষয়।

এর জবাবে কাফেরদেরকে বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে এগুলো আল্লাহর কালাম ও বাণী। নবুওয়াতের কল্যাণ বঞ্চিত গাফলতির নিদ্রায় বিভোর একটি জাতিকে জাগিয়ে দেবার জন্য এ কালাম নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এর অবতীর্ণ হবার বিষয়টি যখনি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন তখন তোমরা একে মিথ্যা বলতে পারো কেমন করে ?

তারপর তাদেরকে বলা হয়েছে , এ কুরআন তোমাদের সামনে যেসব সত্য পেশ করে , বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহার করে নিজেরাই চিন্তা করে বলো এর মধ্যে কোনটা তোমাদের মতে অদ্ভূত। আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা দেখো, নিজেদের জন্ম ও গঠনাকৃতি সম্পর্কে চিন্তা করো – এসব কিছু কি এ কুরআনে এ নবীর মাধ্যমে তোমাদের যেসব শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার সত্যতার প্রমাণ নয় ? বিশ্ব- জাহানের এ ব্যবস্থা তাওহীদের সত্যতা প্রমাণ করে, না শিরকের ? এ সমগ্র দেখে এবং তোমাদের নিজেদের জন্মের ব্যাপারটি দৃষ্টি সমক্ষে রেখে তোমাদের বুদ্ধি- বিবেক কি একথাই বলে যে, যিনি বর্তমানে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনর্বার তোমাদের সৃষ্টি করতে পারবেন না ?

এরপর পরলোকের একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঈমানের পুরস্কার ও কুফরের পরিণাম বর্ণনা করে লোকদের কে অশুভ পরিণামের মুখোমুখি হবার আগে ত্যাগ ও কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা হয়েছে । তাদেরকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, এভাবে নিজেদের পরিণাম শুভ ও সুন্দর হবে।

তারপর তাদেরকে বলা হয়েছে , আল্লাহ মানুষের ভুলের দরূন তাকে আকস্মিকভাবে চূড়ান্ত ও শেষ শাস্তি দেবার জন্য পাকড়াও করেন না, এটা তার মহা অনুগ্রহ। বরং এর পূর্বে তাকে ছোটখাটো কষ্ট, বিপদ-আপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন করেন। তাকে হালকা হালকা ও কম কষ্টকর আঘাত করতে থাকেন। এভাবে তাকে সতর্ক করতে থাকেন, যাতে তার চোখ খুলে যায়। মানুষ যদি এসব প্রাথমিক আঘাতে সতর্ক হয়ে যায় তাহলে তা হবে তার নিজের জন্য ভালো।

এরপর বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ব্যক্তির কাছে কিতাব এসেছে, দুনিয়ায় এটা কোন প্রথম ও নতুন ঘটনা নয় । এর আগে মূসার (আ) এর কাছেও তো কিতাব এসেছিল। একথা তোমরা সবাই জানো। এটা এমন কী কথা যে, তা শুনেই তোমরা এভাবে কানখাড়া করছো !বিশ্বাস করো এ কিতাব আল্লাহরই পক্ষ থেকে এসেছে এবং মূসার (আ) এর যুগে যা হয়েছিল এখন আবার সেসব কিছুই হবে, একথা নিশ্চিত জেনো। আল্লাহর এ কিতাব কে যারা মেনে নেবে এখন নেতৃত্ব তারাই লাভ করবে। একে যারা প্রত্যাখ্যান করবে তাদের জন্য নিশ্চিত ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নেই।

তারপর মক্কার কাফেরদেরকে বলা হয়েছে , নিজেদের বাণিজ্যিক সফরকালে তোমরা অতীতের যেসব জাতির ধ্বংস প্রাপ্ত জনপদ অতিক্রম করে থাকো তাদের পরিণাম দেখো। নিজেদের জন্য তোমরা কি এ পরিণাম পছন্দ করো ? বাহিরের অবস্থা দেখে প্রতারিত হয়ো না। আজ তোমরা দেখছো মুহাম্মদ (সা) এর কথা কতিপয় ছেলে- ছোকরা , গোলাম ও গরীব মানুষ ছাড়া আর কেউ শুনছে না এবং চারদিক তার বিরূদ্ধে কেবল বিদ্রুপ , তিরস্কার ও নিন্দাবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। এ থেকে তোমরা ধারণা করে নিয়েছো, এ বক্তব্য-বিষয় টেকসই হবে না, কিছু দিন চলবে তারপর খতম হয়ে যাবে। কিন্তু এটা কেবল তোমাদের দৃষ্টিভ্রম। তোমরা দিনরাত দেখছো আজ একটি জমি নিষ্ফল পড়ে আছে, সেখানে পানি ও লতাপাতার চিহ্নমাত্র নেই। জমিটি দেখে কেউ কল্পনা করতে পারে না যে, এর গর্ভে সবুজ শ্যামলিমার বিশাল ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। হঠাৎ পরদিন বৃষ্টিপাত হতেই ঐ মরা মাটির বুকে দেখা দেয় অভাবিত পূর্বে জীবন প্রবাহ এবং সর্বত্র সবুজের বিচিত্র সমারোহ।

উপসংহারে নবী (সা) কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে , এরা তোমার কথা শুনে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে এবং জিজ্ঞেস করছে, জনাব! আপনার সেই চূড়ান্ত বিজয় কবে অর্জিত হবে ? তার সন- তারিখটা একটু বলেন না। ওদেরকে বলো , যখন আমাদের ও তোমাদের ফায়সালার সময় আসবে তখন তা মেনে নেয়ায় তোমাদের কোন উপকার হবে না । মানতে হয় এখন মানো। আর যদি শেষ ফায়সালার অপেক্ষা করতে চাও তাহলে বসে বসে তা করতে থাকো।

Post a Comment

0 Comments